স্বদেশ ডেস্ক:
নতুন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সার্চ কমিটির কাছে বিএনপি কারও নাম প্রস্তাব করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে সম্প্রতি নাটোরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত চিকিৎসাধীন বিএনপির নেতা আবদুল আজিজকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
নির্বাচন কমিশন গঠনে গঠিত সার্চ কমিটিকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি যে আওয়ামী লীগ নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যা যা করার তাই করছে। গতবার ও তার আগেরবার যেভাবে করেছে সেই ভাবে জাস্ট একটা খোলস লাগিয়ে মানুষকে প্রতারণা করে তারা আইন তৈরি করেছে, সার্চ কমিটি গঠন করেছে যেন“ওল্ড ওয়াইন নিউ বোতল”।’
তিনি আরও বলেন,`ইতিমধ্যে আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, গঠিত সার্চ কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একজন আছেন যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এই ধরনের সার্চ কমিটি তারা তৈরি করবে বলেই আমরা রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাইনি, যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। আমরা আগেও বলেছি এখনো বলছি, নির্বাচন কমিশন যদি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হয় সেটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন হবে না। তাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না, তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না হতে পারে না। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এটা বিশ্ব স্বীকৃত। ইতিমধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর নিষেধাজ্ঞা তখনই আসে যখন একটি দেশে গণতন্ত্র থাকে না, মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, কেউ জোর করে রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তখন।’
বাংলাদেশের মতো মিয়ানমার সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকারের যে চরিত্র মিয়ানমার সরকারের চরিত্র একই। মিয়ানমার সরকার সামরিক জান্তার মাধ্যমে মানুষকে হত্যা করছে আর এদেশের সরকার জনগণকে বন্দুকের নল দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।’
সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হওয়া বিভিন্ন জন ভূমধ্যসাগরে ভূপাতিত হয়েছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্যকে হাস্যকর এবং দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পরিবার-পরিজন হারিয়েছে তাদের অভিযোগ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের কে তুলে নিয়ে গেছে, এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে জবাবদিহিতা পায়নি। সে ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি বলতে চাই, ভূমধ্যসাগরে কাদের লাশ ভূপাতিত হয়েছে তা দেশবাসী ও গুম পরিবারের সদস্যরা জানতে চায়। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চয়ই এসবের সঙ্গে জড়িত নতুবা আপনারা কিভাবে বলতে পারছেন যে ভূমধ্যসাগরে তাদের লাশ ভূপাতিত হয়েছে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সরকারি নিপীড়ন বেড়েছে। পত্রিকার খবরগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন। গণতান্ত্রিক সমস্ত স্পেসগুলোকে তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। একটা মিটিং করতে দেয় না। গতকাল রোববার আমাদের নয়া পল্টনের অফিসের সামনে ছাত্র দলের উত্তরের ছেলেরা একটা সভা করতে গিয়েছিল। সেখানে জয়গা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টা এখন গোটা বিশ্বে স্বীকৃত, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করে দেখবেন এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা তখনই আসে যখন একটা দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, জনগণকে নির্যাতন করা হয় এবং জোর করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে সরকার তখনই এটা (নিষেধাজ্ঞা) হয়।’